Concord Diagnostics & Molecular Lab Ltd

নারীদের জন্য স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ও প্রতিকার

স্তন ক্যান্সার হল সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলির মধ্যে একটি যা নারীদেরকে আক্রান্ত করে। এটি অনেক সময় পুরুষদের কেও আক্রান্ত করতে পারে। যখন স্তন কোষগুলি বিবর্তিত হয় এবং ক্যান্সার কোষে পরিণত হয় যা সংখ্যাবৃদ্ধি করে এবং টিউমার গঠন করে সাধারণত ওই সময়ই মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রায় 80% স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক হয়, যার অর্থ একটি টিউমার আপনার স্তন থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্তন ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সারের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্যান্সারে আক্রান্তের কারণ।

লক্ষণ ও উপসর্গ:
সাধারণত স্তন ক্যান্সার তেমন কোন লক্ষণীয় উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু যখন এটি হয়, তখন নিম্ন লক্ষণগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
• স্তনের আকার, আকৃতিতে পরিবর্তন।
• একটি ছোট পিণ্ড, যা মটরের মতো ছোট মনে হতে পারে।
• স্তন বা আন্ডারআর্মে বা তার কাছাকাছি একটি পিণ্ড বা ঘন হয়ে যাওয়া যা মাসিক চক্রের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে।
• স্তন বা স্তনবৃন্তের ত্বকের চেহারা বা আকৃতি পরিবর্তন। এর ত্বক অনুজ্জ্বল, ছিদ্রযুক্ত, আঁশযুক্ত বা স্ফীত দেখাতে পারে। এটি স্তনের অন্যান্য অংশের তুলনায় লাল, বেগুনি বা গাঢ় দেখাতে পারে।
• ত্বকের নিচে একটি মার্বেলের মতো শক্ত জায়গা।
• স্তনবৃন্ত থেকে রক্তের দাগযুক্ত বা পরিষ্কার তরল স্রাব নিঃসৃত হওয়া।


কারণ:
গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
• বয়স: ৫৫ বা তার বেশি।
• লিঙ্গ: নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।
• পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান বা অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের স্তন ক্যান্সার থাকে তবে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
• ধূমপান: তামাক ব্যবহার স্তন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্তের অন্যতম প্রধান কারণ।
• অ্যালকোহল পান: গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
• স্থূলতা থাকলে।
• রেডিয়েশন এক্সপোজার: যদি আগে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া থাকে – বিশেষ করে মাথা, ঘাড় বা বুকে তাহলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
• হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HER2) ব্যবহার করেন তাদের এই রোগ নির্ণয়ের ঝুঁকি বেশি থাকে।

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়:
• BRAC1 এবং BRAC2 জেনেটিক টেস্টিং: এই জিনের মিউটেশনগুলি শনাক্ত করা হয় হা স্তন এবং ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে যাদের পারিবারিকভাবে এই ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস রয়েছে
• HER2 টেস্ট: স্তন ক্যান্সারের কোষগুলো HER2 প্রোটিন অধিক পরিমাণে উৎপাদন করছে কিনা টা নির্ধারণ করে, যা চিকিৎসার নির্দেশনা বিকল্পগুলোকে প্রভাবিত করে
• হরমোন রিসেপ্টর টেস্ট (ER/PR): স্তন ক্যান্সার কোষে ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরনের রিসেপ্টর আছে কিনা তা নির্ধারণ করে, যা চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করতে খুবই প্রয়োজনীয়
• ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI): স্তন টিস্যুর বিশদ চিত্র প্রদর্শন করে, মূলত স্তন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মহিলাদের জন্য ব্যবহৃত হয়
• ব্রেস্ট বায়োপসি: স্তনের কোন টিস্যু ক্যান্সার যুক্ত কিনা টা নিশ্চিত করাতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য স্তনের টিস্যুর একটি ছোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়
• ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড : ম্যামোগ্রামে পাওয়া পিণ্ড সমূহ বা কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করার জন্য দরকারি, বিশেষ করে স্তনের শক্ত কোন অংশের জন্য
• ম্যামোগ্রাম: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের টিস্যুতে অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করার জন্য স্তনের একটি এক্সরে করাই হচ্ছে প্রথম ধাপ


সচেতনতা
স্তন ক্যান্সার একটি গুরুতর কিন্তু নিরাময়যোগ্য রোগ, বিশেষ করে যদি এটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়। সঠিক সময়ে পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা এই রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন আরও কার্যকরী নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা রোগীদের সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করে। তাই, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম মূল চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share the Post: