
পাকস্থলীর ক্যান্সার শুরু হয় যখন পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণে অনিয়ন্ত্রিত ক্যান্সার কোষ তৈরি হয়। এই কোষগুলি কখনও একটি টিউমারে পরিণত হতে পারে। এটিকে সাধারণত গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারও বলা হয়। রোগটি সাধারণত অনেক বছর ধরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ বছরের লোকেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
২০২০ সালে, প্রায় ১.১ মিলিয়ন নতুন আক্রান্তের সাথে পাকস্থলীর ক্যান্সার ছিল বিশ্বের পঞ্চমতম সবচেয়ে প্রকট ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এবং বাৎসরিক প্রায় ৮,০০,০০০ ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মধ্যে এটি চতুর্থ প্রধান কারণ।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণ:
গবেষকরা এখনো পাকস্থলীর ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ পুরোপুরি চিহ্নিত করতে পারেননি। তবে কিছু কারণ এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
পারিবারিক ইতিহাস (জেনেটিক প্রভাব)
হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ
চর্বিযুক্ত, নোনতা, বারবিকিউ বা আচারযুক্ত খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ
ধূমপান, ভেপিং বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
স্থুলতা
লক্ষণ ও উপসর্গ
পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। তবে উচ্চ পর্যায়ে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে:
ক্ষুধামন্দা
গিলতে সমস্যা
ক্লান্তি বা দুর্বলতা
বমি বমি ভাব এবং বমি
কারণ ব্যতীত ওজন হ্রাস
অম্বল এবং বদহজম
খাওয়ার পরে পেট ফুলে যাওয়া বা গ্যাস হওয়া
অল্প খাবার খেলেও পেট ভরা অনুভব করা
পাকস্থলীর ক্যান্সারের নির্ণয়ের পরীক্ষা
সঠিকভাবে পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. এন্ডোস্কোপিক এবং ইমেজিং টেস্ট:

Endoscopic Ultrasound (EUS): এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে পাকস্থলীর এবং আশেপাশের টিস্যুর বিস্তারিত চিত্র নেয়া হয়।
Computed Tomography (CT) Scan: টিউমার বা মেটাস্ট্যাসিস সনাক্ত করতে পাকস্থলীর বিস্তারিত ক্রস-সেকশনাল চিত্র প্রদান করে।
Positron Emission Tomography (PET) Scan: ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
Laparoscopy: এটি একটি ক্ষুদ্র অস্ত্রোপচার যা পাকস্থলী ও পার্শ্ববর্তী অঙ্গ পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
২. জেনেটিক ও মলিকুলার পরীক্ষা:
Molecular Profiling: ক্যান্সার কোষে KRAS, BRAF বা অন্যান্য মিউটেশন সনাক্ত করা হয়।
Microsatellite Instability (MSI) Testing: নির্দিষ্ট ধরনের গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের সাথে যুক্ত ডিএনএ অসামাঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে।
Epstein-Barr Virus (EBV) Testing: এটি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের একটি ভিন্ন ধরনের সাথে যুক্ত।
Human Epidermal Growth Factor Receptor 2 (HER2/neu) IHC or FISH: নির্দিষ্ট থেরাপির জন্য HER2 প্রোটিন ওভার এক্সপ্রেশন বা জিন পরিবর্ধন নির্ণয় করা হয়।
PD-L1 Testing: ইমিউনোথেরাপির বিভিন্ন ধরন নির্ধারণের জন্য PD-L1 প্রোটিনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
৩. সংক্রমণ ও টিউমার মার্কার পরীক্ষা:
H.pylori Testing: H.pylori সংক্রমণ পাকস্থলীর ক্যান্সারের অন্যতম ঝুঁকির কারণ।
Tumor Marker Test: CEA এবং CA 19-9 এর মতো টিউমার মার্কার নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
Endoscopic Biopsy: ক্যান্সার কোষ পরীক্ষা করার জন্য পাকস্থলীর আস্তরণ থেকে টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কেন জেনেটিক টেস্টিং গুরুত্বপূর্ণ?
পাকস্থলীর ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে জেনেটিক টেস্টিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট জিন মিউটেশন (যেমন CDH1, TP53) এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি নির্ধারণ করা সম্ভব:
আগেভাগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
নির্দিষ্ট থেরাপির জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা করা যায়।
উপসংহার
পাকস্থলীর ক্যান্সার একটি জটিল এবং জীবনসংকটপূর্ণ রোগ হলেও, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে। সঠিক পরীক্ষা ও জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সহজ হতে পারে। সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।