Concord Diagnostics & Molecular Lab Ltd

যক্ষ্মা: লক্ষণ, ঝুঁকি ও করণীয় যা আপনাকে জানা প্রয়োজন

জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে যক্ষ্মা  বা টিবি  নির্মূল করার জন্য আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় ভাবে অনেক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও, বর্তমানে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলির জন্য এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। যক্ষ্মার তাৎক্ষণিক সনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত চিকিৎসা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য ভুমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে ঢাকা শহরের একটি জনাকীর্ণ এলাকায় পরিচালিত সমীক্ষা অনুসারে যক্ষ্মা রোগের বিভিন্ন স্ট্রেইন চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে বেইজিং EAI5 এবং EAI6_BGD1 সহ আরও বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেইন। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে আনুমানিক ১৩৩ জনের মধ্যে যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া গেছে। যার কারনে বর্তমানে যক্ষ্মার ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

লক্ষণ ও উপসর্গঃ   

সাধারণত যক্ষ্মা সংক্রমণ ঘটে থাকে যখন Tuberculosis bacillus বা Mycobacterium tuberculosis ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে আক্রমন করে এবং ছড়িয়ে পরে। যক্ষ্মা সংক্রমণের তিনটি সাধারণ পর্যায় রয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছুটা আলাদা ধরন রয়েছে।

প্রাথমিক টিবি সংক্রমণঃ  

প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণকে সাধারণত প্রাথমিক সংক্রমণ বলা হয়। এই পর্যায়ে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলি যক্ষ্মার জীবাণু খুঁজে বের করে এবং ধংস করতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু জীবাণু তারপরও বেঁচে থাকতে পারে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে।

প্রাথমিক সংক্রমণের সময় বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয় না। কিছু ক্ষেত্রে ফ্লয়ের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • হাল্কা জ্বর
  • ক্লান্তি
  • কাশি

সুপ্ত যক্ষ্মা সংক্রমণঃ

সুপ্ত টিবি সংক্রমণ পর্যায়টি সাধারণত প্রাথমিক সংক্রমণের পর হয়ে থাকে। যক্ষ্মার জীবাণুর জন্য, আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলি ফুসফুসের টিস্যুর চারপাশে একটি প্রাচীর তৈরি করে। যদি আমাদের ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে তারা আর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তবে কিছু জীবাণু কোন উপসর্গ ছাড়াই সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে।

সক্রিয় যক্ষ্মা রোগঃ

যখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম যক্ষ্মার জীবাণু দমন করতে অক্ষম হয়, তখন সক্রিয় যক্ষ্মা রোগের কারন হয়। এই রোগটি ফুসফুস সহ শরীরের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক সংক্রমণের পর সঠিক চিকিৎসা না হলে, সক্রিয় যক্ষ্মা রোগের বিকাশ হতে পারে। এটি সাধারণত সুপ্ত টিবি সংক্রমণের কয়েক মাস বা বছর পরে ঘটে।

এর সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • কাশি
  • কাশির সময় রক্ত ​​বা শ্লেষ্মা বের হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট বা কাশির সাথে বুকে ব্যথা
  • জ্বর
  • ঠাণ্ডা
  • রাতে ঘাম হওয়া
  • খাবারে অনিহা
  • ওজন হ্রাস
  • অবিরাম ক্লান্তি

যক্ষ্মা রোগের কারনঃ

যক্ষ্মা (টিবি) রোগটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) ব্যাকটেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে। এটি প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে আক্রান্ত করে কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। কোন সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা কথা বলার ফলে ব্যাকটেরিয়াযুক্ত ক্ষুদ্র ফোঁটা বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে অন্যান্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

যক্ষ্মা রোগের ঝুঁকির কারনঃ

কিছু কারণ যেগুলো যক্ষ্মায় সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, তাদের মধ্যে রয়েছে:

  • দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (এইচআইভি/এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ)
  • সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া
  • অপুষ্টি বা দরিদ্র জীবনযাত্রা
  • ধূমপান, অ্যালকোহল, মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা
  • উচ্চ টিবি-প্রকোপযুক্ত এলাকায় বসবাস বা ভ্রমণ

যক্ষ্মা থেকে সুরক্ষিত থাকতে করনীয়ঃ

যেহেতু টিবি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, এর সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী –

  • যক্ষ্মা আক্রান্ত যে কোন ব্যক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা
  • সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • নিজেদের ইমিউন সিস্টেম ভাল রাখা
  • সময়মত টিকা গ্রহণ করা
  • দুরারোগ্য (এইচআইভি/এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার) রোগের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা
  • যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে দেরি বা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা করা

এই সতর্কতাগুলি অনুসরণ করে, আপনি যক্ষ্মা সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারেন এবং এর বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করতে পারেন। ভাল স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, সঠিক এবং বিশুদ্ধ বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, নিজেদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা এবং সময়মত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা, সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। রোগে আক্রান্ত হলে সময়মত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা ও সঠিক চিকিৎসা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং যথাযথ চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ করা, এমনকি নির্মূল করা সম্ভব।

সুস্থ থাকুন, সতর্ক থাকুন এবং আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share the Post: